গোয়া: মরশুমের দ্বিতীয় ডার্বি জিতে সমর্থকদের ধন্যবাদ দিলেন এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। বললেন, “এই জয় সমর্থকদের জন্য”।
শুক্রবার গোয়ার ফতোরদায় জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে হিরো আইএসএলের ফিরতি লেগের ডার্বি ৩-১ গোলে জিতে নেয় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। ম্যাচের শুরুতেই রয় কৃষ্ণা ও দ্বিতীয়ার্ধে ডেভিড উইলিয়ামস ও হাভিয়ে হার্নান্ডেজের গোলে জয় পায় তারা। সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডার তিরির আত্মঘাতী গোল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে সমতা এনে দেওয়া সত্ত্বেও অবশ্য সেই স্কোর ধরে রাখতে পারেনি লাল-হলুদ শিবির।
এমন স্মরণীয় জয়ের জন্য সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে হাবাস বলেন, “এই জয়ের জন্য মেরিনারদের অভিনন্দন জানাই। এই জয় ওদের জন্যই। আমরা তো এখানে একা। সমর্থকেরা অনেক দূরে রয়েছেন। কিন্তু দূরে থাকলেও ওদের সমর্থন যে রয়েছে আমাদের সঙ্গে, তা জানি। এই ম্যাচটা আমরা সমর্থকদের জন্যও খেলতে নেমেছিলাম। তাঁদের কথা দিচ্ছি, দলের ছেলেরা মাঠে একশো শতাংশ দেয় ও দেবে”।
শুক্রবারের ডার্বি জয় নিয়ে হিরো আইএসএলের সফলতম কোচ বলেন, “এই ম্যাচটার একটা আলাদা মোটিভেশন আছে। তবে আমাদের কাছে তিন পয়েন্টটাই সবচেয়ে বড় মোটিভেশন। ছেলেরা যাতে এই ম্যাচে বাড়তি আবেগে ভেসে না গিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হয়েছিল”।
নিজে গোল করে ও বাকি দুটি গোলে সহায়তা দিয়ে এ দিন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব পান ফিজিয়ান স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা। ১৮ ম্যাচে ১৪টি গোল করে ফেললেন তিনি। দলের সেরা তারকাকে নিয়ে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে চান না কোচ। তিনি বলেন, “রয় আমাদের দলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবে শুধু ওর ওপরই নির্ভর করি না আমরা। হাভি, উইলিয়ামসরাও আজ প্রমাণ করে দিয়েছে ওরাও গোল করতে জানে। পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে হবে আমাদের”।
এ দিন নিয়মিত ফর্মেশনে বদল এনে মাঠে দল নামান হাবাস। এই নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, ৩-৪-৩-এ খেলেছি আমরা। চারটে গোল দিয়েছি। কিন্তু তার ফলে আমাদের খেলায় খুব একটা ফারাক হয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ, আমাদের খেলার ধরন, নীতি এবং পরিকল্পনা তো একই ছিল। তফাৎটা শুধু বিপক্ষকে বেশি বা মাঝামাঝি চাপে রাখার মধ্যে। ম্যাচ কোন দিকে গড়াচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে আমরা খেলার স্টাইলে কতটা পরিবর্তন করব”।
এই জয়ের ফলে এটিকে মোহনবাগান ১৮ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই রয়ে গেল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে তাদের এখন পাঁচ পয়েন্টের তফাৎ। যদিও মুম্বই একটি ম্যাচ কম খেলেছে। তবে এটিকে মোহনবাগান শেষ দুই ম্যাচে পয়েন্ট না খোয়ালে তাদের আর এক নম্বরে ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই।
ম্যাচের পরে এটিকে মোহনবাগানের অধিনায়ক প্রীতম কোটাল বলেন, “পরপর দুটো ডার্বি জিতে সত্যিই খুব ভাল লাগছে। এই জয়টা আমাদের পক্ষে খুবই ভাল। আমাদের লক্ষ্য শুধু সেরা চারে থাকা নয়, এক নম্বরে থেকে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা। সেই জন্যই এই ম্যাচটা জেতা আমাদের কাছে খুবই জরুরি ছিল। তবে শুধু এই ম্যাচ নয়, পরের দুটো ম্যাচেও আমাদের জিততেই হবে। সমর্থকদের জন্য আরও ভাল লাগছে। সমর্থখরা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এই ম্যাচে, যেখানে দুই ক্লাবেরই লক্ষ্য লক্ষ্য সমর্থক আছে। সমর্থখদের তাই ধন্যবাদ। আপনারা আমাদের এ ভাবেই সমর্থন করে যান, আমরা আপনাদের ভল ফল দিয়ে যাব”।
ম্যাচের ‘হিরো’ রয় কৃষ্ণা বলেন, “এই ম্যাচটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা জানতাম। এক নম্বর জায়গাটা ধরে রাখার জন্য এই ম্যাচটা আমাদের জিততেই হত। আমি আমার কাজটা করেছি। দলের প্রত্যেকেই যার যার নিজের কাজ ঠিকমতো করেছে। আমাদের রক্ষণেরও যথেষ্ট কৃতিত্ব রয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা প্রথমার্ধের চেয়ে ভাল খেলেছি। এই দলের অংশ হতে পারাটা আমার কাছে সৌভাগ্যের। প্রচুর সমর্থক রয়েছে আমাদের। যাঁরা আমাদের পাগলের মতো সমর্থন করেন। তাদের কাছে এই জয়টা অনেক কিছু। তাদের এই জয়টা উপহার দিতে পেরে আমরা খুশি”।
অন্য দিকে হতাশ এসসি ইস্টবেঙ্গলের সহকারী কোচ অ্যান্থনি গ্রান্ট স্বীকার করে নেন, “ওদের দ্বিতীয় গোলটাই এই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। যেটা আমরা ওদের কার্যত উপহার দিয়েছি। ভাল ডার্বি ম্যাচ হয়েছে। তবে একটা ডার্বি ম্যাচে প্রতিপক্ষ জেতার জন্য যদি সে রকম কিছুই না করে, তা হলে সেই ম্যাচ জেতা অনেক সোজা হয়ে যায়। ওদের আজ এটাই হয়েছে। আমরা ওদের জিততে সাহায্য করেছি”।
ডার্বিতে হার-জিতের গুরুত্ব কতটা, তা দলের ছেলেদের বুঝিয়েছিলেন বলে জানান গ্রান্ট। বলেন, “আমি নিজে ডার্বি খেলেছি। এর গুরুত্ব বুঝি। ছেলেদেরও বুঝিয়েছিলাম। এই ম্যাচে হারের যন্ত্রণাটা আমার ভাল করে জানা আছে। তবে দলের ছেলেরা সেরাটাই দিয়েছে। একটা গোল যদি দিয়ে দিই, তা হলে কিছু করার নেই। পরের মরশুমেও ওদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই দুটো ম্যাচ খেলব। তখন ওদের হারানোর সুযোগ পাব। ওরা খুব ভাল দল। ওরা যে জায়গায় রয়েছে, তাতেই সেটা প্রমাণ হয়। আগামী মরশুমে আশা করি ওদের হারাতে পারব”।