কলকাতা: স্ট্র্যান্ড রোডে নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে একজন হেয়ার স্ট্রিট থানার এএসআই, একজন রেলকর্মী ও ৬ জন দমকল কর্মী। বাসকি একজনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে অন্তত ১০ জন দমকল কর্মী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে এবং উদ্ধার কার্য তদারকিতে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পাশাপাশি আগুনে ঝলসে মৃত সাতজনের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং মৃতদের পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, পাঁচ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা ১০ মিনিট নাগাদ স্ট্র্যান্ড রোডে পূর্ব রেলের নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ের ১৩ তলায় প্রথমে আগুন লাগে। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিন্তু ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় আগুনের উৎসস্থলে পৌঁছতে চরম সমস্যার সম্মুখীন হন দমকল কর্মীরা। আগুন যাতে না ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার জন্য পুরো ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। আগুন নেভাতে হাইড্রোলিক ল্যাডারও ব্যবহার করেন দমকল কর্মীরা। ভবন থেকে সব কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে বাইরে বের করে দেওয়া হয়। ততক্ষণে ১৩ তলার আগুন ভবনের ১২ তলাকেও গ্রাস করে নেয়। দমকল কর্মীরা কোনওক্রমে লিফটে চেপে ভবনের ১২ তলায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রচণ্ড তাপে তাঁদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন তাঁরা। বিধ্বংসী আগুনের লেলিহান শিখা ও বিষাক্ত গ্যাসের জোড়া ছোবলে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন তাঁরা। চার দমকল কর্মীর দেহ এতটাই ঝলসে গিয়েছে যে তাঁদের শনাক্ত করতেও সমস্যা হয়। আগুনে ঝলছে হেয়ার স্ট্রিট থানার এক এএসআই ও আরপিএফের এক কর্মীরও মৃত্যু হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সব মিলিয়ে ২০টি দমকলের ইঞ্জিনকে ব্যবহার করা হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র সহ শীর্ষ প্রশাসনিক ও পুলিশ আধিকারিকরা। রাত সোয়া এগারোটা নাগাদ পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দমকল মন্ত্রী, পুলিশ কমিশনার ও দমকলের ডিজি জাভেদ শামিমের কাছ থেকে অগ্নিকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ নেন তিনি। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রেল আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।