in খেলা, ,

দুদিনেই ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিলো ভারত

আহমেদাবাদ: ইংল্যান্ডকে ১০ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত। পরের টেস্ট না হারলেই জুনের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে ভারত। জয়ের জন্য মাত্র ৪৯ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৭.৪ ওভারে কোনও উইকেট না-হারিয়ে টেস্ট জিতে নেয় ভারত৷ দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ২৫ এবং শুভমন গিল ১৫ রান অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন৷

এরমধ্যেই এদিন দ্বিতীয় দ্রুততম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। আমবাদাবাদ টেস্টের আগে ৭৬টি ম্যাচে অশ্বিনের সংগ্রহ ছিল ৩৯৪টি উইকেট। মোতেরায় প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট দখল করেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে নেন আরও ৪টি উইকেট। দ্বিতীয় দিনে জোফ্রা আর্চারের উইকেটটি তুলে নেওয়া মাত্রই মাইলস্টোনে পৌঁছে যান অশ্বিন। দ্বিতীয় ইনিংসের শেষে তার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৭ টেস্টে ৪০১টি উইকেট।সবথেকে কম টেস্টে ৪০০ উইকেট নেওয়ার নজির রয়েছে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি স্পিনার মুথাইয়া মুরলিধরনের নামে। তিনি ৭২টি টেস্টে ৪০০ উইকেটের মাইলস্টোন ছুঁয়েছিলেন। অশ্বিন মাইলস্টোন পৌঁছতে ৫টি টেস্ট বেশি সময় নিলেন।

প্রথম দিনে ১৩ উইকেটের পর আজ দ্বিতীয় দিনে প্রথম দুই সেশনেই পড়েছে ১৭ উইকেট। এমন উইকেটবৃষ্টির মাঝে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড গড়েছে এক লজ্জার রেকর্ড। ভারতের বিপক্ষে এর আগে টেস্টে কখনো তিন অঙ্কের নিচে অলআউট হয়নি ইংল্যান্ড। সেই রেকর্ডটা আচমকা ৮১ রানে নেমে এসেছে আজ। অবশ্য ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোরে অলআউট হওয়ার বহু আগেই ম্যাচের ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়ে গেছে। তৃতীয় টেস্ট জিতে চার টেস্টের এই সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত। প্রথম ইনিংসে অক্ষর প্যাটেল ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিয়েছিলেন ৩টি। বাকিটা গিয়েছিল ইশান্ত শর্মার ভাগে। আইপিএলে এ তিনজনই খেলেন দিল্লি ক্যাপিটালসে। আজ দ্বিতীয় ইনিংসে ইশান্ত শর্মা বল হাতেও পেলেন না। আগের মতোই ৯ উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন অশ্বিন (৪) ও অক্ষর (৫)। ইংল্যান্ডের শেষ উইকেট জুটির সামনে আচমকা ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে বল তুলে দেওয়া হলো। প্রথম ইনিংসে গোলাপি বলটা নিয়ে হাত ঘোরানোর সুযোগ না পাওয়া সুন্দর চতুর্থ বলেই তুলে নিলেন জিমি অ্যান্ডারসনকে। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ড গুটিয়ে গেল ৮১ রানে। সুন্দরকে তবু উইকেট পেতে চতুর্থ বলের অপেক্ষা করতে হয়েছিল। দিনের মূল দুই তারকার ততক্ষণ অপেক্ষা সহ্য হয়নি। ৩৩ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডকে ধাক্কা দিতে অক্ষরের কোনো অপেক্ষাই করতে হয়নি। অক্ষরের প্রথম তিন বলেই তিনবার আউটের চিহ্ন দেখিয়েছিলেন আম্পায়ার। প্রথম বলেই ফিরেছেন জ্যাক ক্রলি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে দুবার মৃত্যুবাণ দেখেছেন জনি বেয়ারস্টো। দ্বিতীয় বলে রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত বদলাতে পেরেছিলেন। তৃতীয় বলে লাইন মিস করে বোল্ড হওয়ায় সে সুযোগ আর পাননি।

এর আগে স্পেলের প্রথম বলেই উইকেট পাওয়ার কাণ্ড অবশ্য দিনের প্রথম সেশনেই দেখা হয়ে গেছে। অলরাউন্ডার বেন স্টোকস সহ চার পেসার নিয়ে নামাটা ইংল্যান্ডের কত বড় ভুল ছিল, সেটা অধিনায়ক জো রুটই প্রমাণ করে দিলেন। ভারতের ইনিংসে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে রোহিত শর্মা ফেরার পর হাত ঘোরানোর ইচ্ছে হয়েছিল রুটের। ইংল্যান্ড মাত্র এক স্পিনার নেওয়ায় এতক্ষণ এই ভয়ংকর পিচে উইকেট তোলার সব ভার একাই বহন করতে হচ্ছিল জ্যাক লিচকে। রুট বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই ফিরিয়েছেন ঋষভ পন্তকে। এরপর যা হলো, সেটা রুটেরও হয়তো বিশ্বাস হয়নি।ভারতের ১১৫ রানে রোহিত ফেরার পর বোলিংয়ে এসেছিলেন। ভারত অলআউট হয়েছে ১৪৫ রানে। এর মাঝে ভারতের যে ৫ উইকেট পড়েছে, সব কটিই রুটের। সেটাও মাত্র ৮ রান খরচায়! টেস্ট ইতিহাসেই এর চেয়ে কম খরচায় ৫ উইকেট প্রাপ্তির ঘটনা মাত্র ৪টি!ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ইনিংস শেষে রুটের বল বুঝে নেওয়ার স্বাদটা তেতো করে দিয়েছেন অক্ষর। রুটই আবার ব্যাট হাতে নেমে গেলেন ইংল্যান্ড ইনিংসের চতুর্থ বলে। একটু পরে ডম সিবলিকেও তুলে নিলেন অক্ষর। খানিক বাদে রুটকেও। যদিও এর আগে আরেকটি রিভিউ এলবিডব্লুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল রুটকে। এত দিন রিভিউ ভারতের পক্ষে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা ইংল্যান্ড সেই সিদ্ধান্তে নিজেদের ভাগ্যবান ভেবেছিল কি না, কে জানে। ভেবে থাকলেও তৃপ্তিটা বেশিক্ষণ টেকেনি। অক্ষর কিছুক্ষণ পরই রুটকে তুলে নেয় ১৯ রানে। ইংল্যান্ডের স্কোর তখন ৫৬। মাঝে অশ্বিনকে প্রথম উইকেটের স্বাদ বুঝিয়ে দিয়ে ফিরেছেন স্টোকসও। সেই শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকেই ইংল্যান্ডের ব্যাটিংকে টেনে নেওয়া রুটের বিদায়ের পর চেনা চিত্রনাট্যই দেখা দিল। ১৫ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে বসল ইংল্যান্ড। অক্ষরের ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট আর ক্যারিয়ারে প্রথমবার ম্যাচে ১০ উইকেট—দুটিই হয়ে গেছে।ইংল্যান্ডের ৮১ রানে অলআউট হওয়া নিশ্চিত করে দিয়েছে আরেকটি বিষয়। ইংল্যান্ড দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৯৩ রান করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত করে ৪৯ রান। মীমাংসা হয়েছে এমন টেস্টে দুই দল মিলিয়ে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড ২৩৪। সেটা এই টেস্টে দুই দলের প্রথম ইনিংসেই পেরিয়ে গেছে। তবে ১৯৪৬ সালের পর দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে কম রান তোলার রেকর্ডটি কিন্তু হয়েই গেল আজ।

What do you think?

Written by News Editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নাম বদল বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টেডিয়ামের

পেট্রোপণ্যের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে গাড়ির বদলে ই-স্কুটিতে সওয়ারি মমতা