কমল ভট্টাচার্য
(বর্ষীয়ান সাংবাদিক, প্রাক্তন সভাপতি কলকাতা প্রেস ক্লাব)
করোনা আবহের মধ্যে দ্বিতীয় মোদি সরকারের দ্বিতীয় বাজেট পেশ করা হল সোমবার। তবে মোদি সরকারের বাজেট খুব বেশি আশা জাগাতে পারল না আমজনতার। বরং বাজেটের ঘোষণায় যেভাবে রাস্তা তৈরির জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় কেন্দ্র সরকারের নজরে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। বাজিতে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। বলা হয়েছে ৬৭৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হবে। পাশাপাশি কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি রাস্তা সংস্কার করা হবে বলে জানানো হয়েছে বাজেটে। এবার ভোট হচ্ছে পাঁচ রাজ্যে। এগুলি হল পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরালা, তামিলনাড়ু ও উত্তর ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। বাজেটে এই পাঁচ রাজ্যের ভোটের গুরুত্ব পেয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের পাশে যে রয়েছে সরকার তাও বোঝানো হয়েছে এই বাজেটে।তবে বাজেট নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যেখানে বিধানসভা ভোট সেখানে রাস্তার পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দিল্লিতে ভয়ঙ্কর ঠান্ডার মধ্যে গত দুমাস ধরে তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কৃষকদের জন্য কিছু বলা হয়নি এই বাজেটতে। শুধু তাই নয় আন্দোলনরত কৃষকদের সাথে কথা বলতে যে পরিমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল সেটাও দেখানো হয়নি কেন্দ্র সরকারের তরফে। আলোচনা কয়েক দফায় হলেও সমস্যা মেটে নি। কারণ আন্দোলনরত কৃষকরা তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে অনড় ছিলেন। আর এছাড়া উল্লেখ যোগ্য বিষয়গুলো হলো কেন্দ্র ডিস-ইনভেস্টমেন্ট এর দিকে যাচ্ছে। তবে আমরা সকলেই জানি ডিস-ইনভেস্টমেন্ট এর ফল ভালো হয় না। সব থেকে বড় কথা কেন্দ্র এই বাজেটে কেন্দ্র অর্থমন্ত্রী যে ঘোষণা করেছেন সেটা হলো বিমায় বেসরকারি বিনিয়োগ ৪৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৪% করা হচ্ছে। বিমা ছিল সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা, কিন্তু এই বিদেশী বিনিয়োগের ফলে আমানতকারীদের কাছে নিশ্চিয়তায় কোনও প্রশ্নচিহ্ন উঠবে না তো, এই প্রশ্ন কিন্তু আজ থেকেই উঠতে শুরু করবে। এছাড়া বিমায় কাজ করা কয়েক লক্ষ কর্মী আজ থেকে অনিশ্চিয়তায় মধ্যে পড়লেন। তবে এই আশঙ্কা অনেক দিন ধরেই করে আসছিলেন বিমা কর্মীরা। পাশাপশি এলআইসি এর শেয়ার বাজারে বিক্রি করা হবে বলে বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া অলাভজনক সরকারি সংস্থা বিক্রি করার কথা বলা হয়েছে আজকের বাজেটে। তবে এই ঘোষণা যে কোনো শুভ ফল আনতে পারে না তা সাধারণ মানুষ বুজতে পারছেন। গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য বাজেটে তেমন কিছু বলা হয় নি। তবে ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে আর আয়কর দিতে হবে না। তবে এই ক্ষেত্রে আর্থিক কোনো লাভ হবে না তাদের।তবে বাংলার ক্ষেত্রে বড় কোনো প্রাপ্তি নেই এই বাজেট। সব মিলিয়ে এই বাজেট গতানুগতিক ধারার বাজেট।