in খেলা, ,

দু’গোলে পিছিয়ে থেকেও দুরন্ত জয় এটিকে এমবির

গোয়া: ২৮ মিনিটের মধ্যে তিনটি গোল! তাতেই কেরালা ব্লাস্টার্সকে প্রায় উড়িয়ে দিয়ে হিরো আইএসএল টেবলের শীর্ষস্থানে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে দিল এটিকে মোহনবাগান। গত ম্যাচে রয় কৃষ্ণার গোলে ফেরাটা তেমন মধুর হয়নি নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কাছে হেরে যাওয়ায়। কিন্তু এ দিন সবুজ-মেরুন শিবিরের সেরা স্ট্রাইকার নিজের ফর্মে ফিরলেন রাজকীয় ঢঙে। ৫৮ মিনিট পর্যন্ত দু’গোলে পিছিয়ে থাকার পরও তিনটি গোল দিয়ে ম্যাচ জিতে মাঠে ছাড়ল আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল।ডেভিড উইলিয়ামস, এডু গার্সিয়া চোটের কবলে। মনবীর সিংকে প্রথম ৪৫ মিনিট ও হাভিয়ে হার্নান্ডেজকে এ দিন ৮০ মিনিট পর্যন্ত রিজার্ভ বেঞ্চেই রাখা হয়। তার পরেও এমন অসাধারণ জয় ছিনিয়ে নিয়ে এটিকে মোহনবাগান তাদের প্রথম আইএসএল খেতাব জয়ের ইঙ্গিত দিয়ে রাখল। প্রায় ৫০ মিনিট ম্যাচের রাশ কেরালা ব্লাস্টার্সের হাতে থাকার পরে নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া করার মাশুল দিতে হয় হাবাসের দেশেরই কোচ কিবু ভিকুনার দলকে। এই ফলের পরেও অবশ্য লিগ টেবলে দুই দলের জায়গা বদল হল না। তবে সেরা দুই দলের মধ্যে এখন মাত্র একটি জয়ের ফারাক। ১৪ ও ৫১ মিনিটের মাথায় যথাক্রমে গ্যারি হুপার ও কোস্তা নহামোয়নেসুর গোলে এগিয়ে যায় ব্লাস্টার্স। ৫৯ মিনিটে সবুজ-মেরুন জার্সিতে প্রথম মাঠে নামা হোসে ব্যারেটোর দেশের স্ট্রাইকার মার্সেলো পেরেইরা বা মার্সেলিনহো গোলের লকগেট খোলেন। যার মধ্যে দিয়ে ৬৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ও ৮৭ মিনিটে গোল করে দলকে তাদের আট নম্বর জয় এনে দেন রয় কৃষ্ণা। এই নিয়ে চলতি লিগে ন’টি গোল হয়ে গেল রয়ের। সোনার বুটের দৌড়ে তিনি এখন ইগর অ্যাঙ্গুলোর পরেই দ্বিতীয় স্থানে।

এডু গার্সিয়া, ডেভিড উইলিয়ামসের চোট। সেই অভাব পূরণ করার জন্য এ দিন এটিকে মোহনবাগান প্রথম এগারোয় রাখে ওডিশা এফসি থেকে আনা তাদের নতুন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মাসেলিনহোকে। এটিকে মোহনবাগান যেখানে ৩-৫-২-এ শুরু করে, সেখানে কেরালা ব্লাস্টার্স শুরু করে ৪-৪-২-এ। হাভিয়ে হার্নান্ডেজকে ডাগ আউটে রেখে, চার বিদেশিকে প্রথম এগারোয় রেখেই দল নামান আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।কিন্তু অ্যাটাকিংয়ের সমস্যা সবুজ-মেরুন শিবিরকে শুরু থেকেই ভোগাতে শুরু করে। তার ওপর কেরালা ব্লাস্টার্স শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তোলে এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। গ্যারি হুপারের রিটার্ন পাসে যদি ঠিকমতো পা লাগাতে পারতেন, তা হলে শুরুতেই এগিয়ে যেত তারা।কিন্তু প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গনদের সমানে চাপে রাখেন কেপি রাহুলরা। আরও একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। এই সময়ে এটিকে মোহনবাগানকে মূলত তাদের গোল এরিয়াতেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলতে দেখা যায়। কিন্তু এই চাপ তারা বেশিক্ষণ রাখতে পারেনি। ১৪ মিনিটের মাথায় গ্যারি হুপারের অসাধারণ গোলে এগিয়ে যায় কেরালা ব্লাস্টার্স। ডান দিক দিয়ে ওঠা সন্দীপ সিং মাঝ মাঠ পেরিয়ে তাঁর বাঁ দিকে হুপারকে বল দেন, যা তিনি বুক দিয়ে নামিয়ে প্রায় ৩৫ গজ সোজা দূর থেকে নেওয়া শটে গোল লক্ষ্য করে উড়িয়ে দেন। গোল লাইন থেকে খানিকটা এগিয়ে আসা অরিন্দম লাফিয়ে উঠেও মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বলের নাগাল পাননি। বল জালে জড়িয়ে যায়।

২০ মিনিটের মাথায় ফের মারে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মারে। বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নেন তিনি। কিন্তু তা বারের একটু ওপর দিয়ে চলে যায়। ২০ মিনিটের পর থেকে এটিকে মোহনবাগান ক্রমশ খেলায় ফেরার চেষ্টা শুরু করে। ওডিশার হয়ে মাঠে নেমে গত আট ম্যাচে একটিও গোল না পাওয়া মার্সেলিনহোকে সবুজ মেরুন জার্সিতে প্রথম ম্যাচেই শুরু থেকে আত্মবিশ্বাসী লাগেনি।সতীর্থদের সঙ্গে, বিশেষ করে রয় কৃষ্ণার সঙ্গে বোঝাপড়া করে মানিয়ে নিতে স্বাভাবিক ভাবেই সময় লাগে তাঁর। ৪৪ মিনিটের মাথায় বাঁ দিকের উইং দিয়ে উঠে রয়ের উদ্দেশ্যে বল চিপ করেছিলেন মার্সেলিনহো। কিন্তু বক্সের মধ্যে রয়ের কাছে পৌঁছনোর আগেই বল চলে যায় কেরালার গোলকিপার আলবিনো গোমেজের হাতে।দ্বিতীয়ার্ধে শেখ সাহিলের পরিবর্তে প্রণয় হালদার ও সুমিত রাঠির পরিবর্তে মনবীর সিংকে নামায় এটিকে মোহনবাগান। উদ্দেশ্য অবশ্যই ছিল আক্রমণের ধার বাড়ানো। কিন্তু তারা আক্রমণের ধার বাড়ানোর আগেই এটিকে মোহনবাগানের ওপর আরও একটি গোল চাপিয়ে দেয় কেরালা ব্লাস্টার্স। এ বার সেট পিস মুভ থেকে গোল করেন কোস্তা নহামোয়নেসু। সাহাল আব্দুল সামাদের কর্নার থেকে রাহুল বল দিয়েছিলেন কোস্তাকে। তিনি প্রথমে হেড করেন গোলের দিকে। অরিন্দম তা আটকে দিলেও ফিরতি বল জালে জড়িয়ে দেন।

কোস্তার এই গোলের আট মিনিটের পরেই প্রথম গোল করে ব্যবধান কমান মার্সেলিনহো। এ বারের হিরো আইএসএলে তাঁর প্রথম গোল ও সব মিলিয়ে লিগে ৩২তম গোল তাঁর। মনবীরের ফরোয়ার্ড পাসে বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার এবং ঠাণ্ডা মাথায় প্রথম টাচেই গোলের বাঁ দিকের কোনে বল ঠেলে দেন তিনি। মনবীর নামার পরে সবুজ-মেরুন আক্রমণ ক্রমশ চাঙ্গা হতে শুরু করে। প্রথম গোলটা তারই প্রতিফলন।প্রথম গোল পাওয়ার পরই দ্বিতীয় গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এটিকে মোহনবাগান এবং ৬৫ মিনিটের মাথায় সেই সুযোগ পেয়েও যায় তারা। বক্সের মধ্যে জেসেল কার্নেইরো অন্যায় ভাবে মনবীরকে বাধা দেওয়ায় পেনাল্টি দেন রেফারি অজিত কুমার মিতেই। সেই পেনাল্টি থেকেই গোল করে সমতা আনেন রয় কৃষ্ণা।

তিনটি ম্যাচে গোলহীন থাকার পরে গত ম্যাচে গোলে ফিরেছিলেন রয়। কিন্তু সে দিন দল হেরে যাওয়ায় মনমরা ছিলেন তিনি। কিন্তু রবিবার এই গোলের পরই আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটতে দেখা যায় তাঁকে। চেনা রয় কৃষ্ণাকে ফিরে পাওয়া যায় এই গোলের পরই। এর মধ্যে ৮২ মিনিটের মাথায় হাভিয়ে হার্নান্ডেজ মাঠে নামায় রয়কে গোলের জন্য আরও মরিয়া হয়ে উঠতে দেখা যায়। মার্সেলিনহোর বদলে নামেন হাভি।৮৭ মিনিটের মাথায় যে গোলটি করে দলকে এগিয়ে দেন রয়, সেটি সেই পুরনো রয়ের পক্ষেই সম্ভব। ডান দিকের উইংয়ে বিপক্ষের ডিফেন্ডার সন্দীপের পা থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে তিনি বক্সের মধ্যে ঢুকে জিকসন সিংকে ধোঁকা দিয়ে সোজা গোলে শট নেন এবং তা গোলের বাঁ দিকের কোনে ঢুকে পড়ে।এই গোলের পরেও হাল ছাড়েনি এটিকে মোহনবাগান। ৯০ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে ওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফেরা বলে জোরালো শট নিয়েছিলেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ। কিন্তু তা গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই সময় দুই দলের খেলোয়াড়দের বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠতেও দেখা যায়। যার জেরে একসঙ্গে চারজনকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি, যাঁর মধ্যে রয় কৃষ্ণাও ছিলেন। এ দিন কড়া হাতে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেন রেফারি। দুই দলকে মোট চারটি করে হলুদ কার্ড দেখান তিনি। শেষ মুহূর্তে রয়ও ফের তাঁর দশ নম্বর গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। তবে তাতে তাঁর কোনও আফসোস ছিল না। কারণ দলকে ততক্ষণে তিনি চলতি লিগে অষ্টম জয় এনে দিয়েছেন এবং শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে এখন তাদের মাত্র একটি জয়ের ফারাক।

What do you think?

Written by News Editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিজেপির সভামঞ্চে জাতীয় সংগীতের অবমাননার অভিযোগে সরব অভিষেক