সংঘমিত্রা চৌধুরী
সম্পাদক, রাজ্য বিজেপি
বিজেপির পরিবর্তন যাত্রা, যাকে অনেকেই রথযাত্রা বলছেন তা আসলে একটি অভিনব শোভাযাত্রা।গতকাল গিয়েছিলাম বর্ধমানে এই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে। মানুষের আবেগ যে আজ কোথায় পৌঁছেছে তা এই পরিবর্তন যাত্রায় না গেলে টেরই পেতাম না। বিরোধীরা যাকে রথ বলছেন সেটি আসলে একটি সুসজ্জিত বাস। বাসের ভেতরে প্রবেশ করে সিঁড়ি বেয়ে মাথার উপরে ওঠা যায়। সেখানে গাঁদা ফুলের মালা দিয়ে সুসজ্জিত একটি প্ল্যাটফর্ম, পাঁচ ছয় জন অনায়াসে দাঁড়াতে পারে।
শোভাযাত্রার বর্ণনা প্রসঙ্গে বলি, এই রথ বা বাসের সামনে পেছনে বেশ কয়েকটি ট্যাবলো চলে তার মধ্যে যুবক-যুবতীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে, আর থাকে বেশ কয়েকটি বাইক ও গাড়ি۔۔ অনেকটা কনভয়ের মত চলে সারি বেঁধে সব কয়টি বাহন বা যান। যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পর যখন বর্ধমান শহর ছেড়ে আমরা উত্তর বর্ধমানের পথে পৌঁছলাম তখন বুঝতে পারলাম এই যাত্রার কি মহিমা। অসংখ্য মানুষ রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে, তাঁরা এসেছেন রথ দেখতে।তারপর দেখি একটু দূরে দূরে জমায়েত, সেখানে হাজার, হাজার স্বতঃস্ফূর্ত মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন রথের অপেক্ষায়।কারো হাতে ফুল কারো হাতে বাতাসায় ভরা থালা, কারো হাতে শঙ্খ, কারোর হাতে মঙ্গল প্রদীপ।এঁরা কি ঈশ্বর দর্শনে এসেছেন? জানতে মন চাইলো, জিজ্ঞেস করলাম একজনকে। উনি বললেন, “না আমরা তো জানি এই রথে কোন ঠাকুর দেবতা নেই।””তবে এই আয়োজন কিসের? শঙ্খ, প্রদীপ, বাতাসা, ফুল?” ওরা বললেন, “আমরা এই রথকেই দেখতে এসেছি, আপনারা এসেছেন, আপনাদের অভিনন্দন জানানোর জন্যই এসব কিছুর আয়োজন।” আরেকজনের বক্তব্য, “আমরা ভারতীয় জনতা পার্টি কোরি, পার্টিকে ভালোবাসি, পার্টির এই যাত্রায় আমরা শামিল হতে এসেছি।”সেই পরিবর্তন যাত্রার বাস, থুড়ি, রথ কে ঘিরে মানুষের যে উন্মাদনা তা দেখে আমি মুগ্ধ হলাম।
সকাল নটা থেকে রাত নটা পর্যন্ত ওই বাসকে ঘিরে কোথাও ধামসা মাদল নিয়ে, কোথাও চাষিরা লাঙল কাঁধে যে নাচ গান করলেন তা দেখার মত।কখনো বাসটি গ্রামের মেঠো রাস্তা ধরে ছুটে চলেছে চল্লিশ কিলোমিটার বেগে, তো কখনো দাঁড়িয়ে পড়েছে মানুষের আবেগের মাঝখানে স্তম্ভিত হয়ে।সারাদিন বাসের মাথায় দাঁড়িয়ে কোথা দিয়ে যে সময় কেটে গেল, বুঝতে পারলাম না। চমক ভাঙল যখন এক কার্যকর্তা এসে আমাকে বললেন, “দিদি, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন, একটু বসুন ভেতরে গিয়ে।”বাসের ভেতরে জনা সাতেক মানুষের বসার ব্যাবস্থা আছে। শরীর ক্লান্ত। সুন্দর ঝাঁ চকচকে ইন্টিরিয়র। কিন্তু বাইরের আনন্দ, উচ্ছাসে মাতোয়ারা মন তখনো এক ঘোরের মধ্যে। বুঝলাম রথ দেখা, কলা বেচা এক সঙ্গে হয় না। এ ক্ষেত্রে রথকেই বেছে নিলাম। বিশ্রাম নেব যাত্রা শেষে।