সুপ্রিয় অধিকারী
সারা পৃথিবীতে যেকোনো বড় ম্যাচের আগে যা হয় লিভারপুল ম্যানসিটি ম্যাচ এর আগেও সেই কোচেদের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। ক্লপ, ডিসেম্বরে করোনার কারণ দেখিয়ে এভারটনের বিরুদ্ধে ম্যানসিটির ম্যাচ স্থগিত হওয়ায় ম্যানসিটি পনের দিনের বিশ্রাম পাওয়ার কথা বলেছেন। এ কথা সত্যি যে, সেই সময় সিটিজেনরা বর্তমান ফর্ম এর ধারে কাছে ছিল না এবং পরবর্তী সময় থেকে সিটিজেনরা চ্যাম্পিয়ন এর মত খেলছে। পেপ আবার এই তির্যক বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন লিভারপুল পিছিয়ে পড়ায় “ক্লপ অজুহাত দিচ্ছেন “।এই বাকযুদ্ধ থেকে আজকের ম্যাচের উত্তেজনা বোঝা যায়। ম্যানসিটি এই মুহূর্তে লিভারপুলের থেকে সাত পয়েন্টে এগিয়ে আছে, একটি ম্যাচ কম খেলে। সুতরাং আজ জিততে পারলে চার বছরে তৃতীয় প্রিমিয়ার লিগ টাইটেল এর দিকে অনেকটাই এগিয়ে যাবে। আবার লিভারপুল জিতলে প্রবলভাবে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে ফিরে আসবে। এই বছর বাইশটা ম্যাচের শেষে বিভিন্ন সময়ে সাতটি টিম লীগ শীর্ষে থেকেছে। গত ডিসেম্বরে ম্যানসিটি টেবিলের দশ নম্বরে ছিল, এখন এক নম্বরে। টটেনহ্যাম যে এক নম্বরে ছিল সে এখন নয় নম্বরে ।এর থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে অসম্ভব ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে লীগ এগোচ্ছে। তাই একথা বলাই যায় এই ম্যাচ লীগের নির্ণয়ক হবে না। কিন্তু গতিপথের দিকে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশ করবে।ম্যাচের আগে চোট-আঘাতের কথা বললে বলতে হয় লিভারপুলের সেন্ট্রাল ডিফেন্স অর্থাৎ ভ্যান জীক, মাতিপ, গোমেজ এই মরশুমে আর আর খেলতে পারবেন বলে মনে হয় না। তবে কয়েকটি ম্যাচ পর অ্যালিসন বেকার, ফ্যাবিনহো এবং সাদিও মানে এই ম্যাচে দলে ফিরবেন। অন্যদিকে পেপ , আগুয়েরোর সাথে কেবিডি কে পাবেন না। যদিও পেপের মাঝ মাঠ তেল খাওয়া মেশিনের মত খেলছে কিন্তু এই ম্যাচে পেপ কেবিডির অভাব বুঝতে পারবেন।গত কয়েকটা ম্যাচে পেপ, লাপোর্তে, ডায়াস এবং স্টোনকে রক্ষণে রেখে পর্তুগিজ তারকা কঞ্চেলোকে প্রায় মাঝ মাঠে খেলিয়েছেন। কিন্তু এই ম্যাচে মানে এবং সালাহকে আটকাতে কঞ্চেলো এবং ওয়াকার দুই উইং ব্যাক পজিশনে খেলবেন বলে মনে হয়। বিশেষ করে মানের গতিকে সামলাতে দ্রুত গতির ‘রিকভ্যারি ব্যাক’ ওয়াকারকে লাগবে।
ডিফেন্স এর মাঝখানে রুবেন ডায়াস এবং জন স্টোন অসাধারণ খেলছেন। তেসরা জানুয়ারি চেলসির বিরুদ্ধে গোল খাওয়ার পর থেকে ম্যানসিটি আর কোনো গোল খায় নি। মাঝ মাঠ এবং আক্রমণের নতুন ফর্মেশন , নতুন কৌণিক পাস এর জন্য পেপের দল বিখ্যাত ছিল। কিন্তু এই বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে রক্ষণ সংগঠনে পেপ অসাধারণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। এই ম্যাচে তার চরম পরীক্ষা হবে ।কেবিডি না থাকায় হোল্ডিং পজিশনে রদ্রি ও দুই দিকে গুন্দোগান এবং বার্নার্দো সিলভা খেলবেন। আক্রমণে জেসুস কে সামনে রেখে দুই দিকে স্টার্লিং এবং ফডেন। আবার ফলস নাইন নিয়ে খেললে ফেরান টোরেস, ফডেন এবং স্টার্লিং সামনে শুরু করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মাহরেজ এবং জেসুস পরে আসবেন। তবে লিভারপুলের প্রায় নতুন সেন্ট্রাল ডিফেন্সকে চিন্তায় ফেলে দেওয়ার রসদ পেপের হাতে ভালো মাত্রায় রয়েছে।লিভারপুল চিরাচরিত চার-তিন-তিন ফরমেশনে খেলবে বলে মনে হয়। মাঝে রক্ষণে ফ্যাবিনহো পাশে ওজান কাবাকের আজ অভিষেক হবে। দুই উইং ব্যাক রবার্টসন এবং ট্রেন্ট আর্ণল্ড। সেক্ষেত্রে রক্ষণের সামনে হোল্ডিং পজিশনে হেন্ডারসন নিজের জায়গায় ফিরে যাবেন। দুইপাশে থিয়াগো এবং উইনালডাম। থিয়াগোর বল যোগানের ওপর সালাহ,মানে, ফিরমিনোর আক্রমণ নির্ভর করবে। তবে দুই উইং এ মানে ও রবার্টসন এবং সালাহ ও আর্নল্ড কে সামলানোই ম্যানসিটির মূল চ্যালেঞ্জ ।আর সবশেষে বলি এই ম্যাচের ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়না। দুই দলেই এতো ভালো ভালো ফুটবলার রয়েছেন, যে কেউ যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের গতি পাল্টে দিতে পারেন। তাই ফলাফলের দুর্ভাবনায় না ভুগে ম্যাচটি উপভোগ করতে অনুরোধ করবো।