কাশীনাথ ভট্টাচার্য
(বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও ফুটবল বিশ্লেষক)
বার্সেলোনা – ১ রেয়াল – ৩
(ফাতি ৮) (ভালভেরদে ৫, রামোস পে ৬৩, মোদরিচ ৯০)
বিতর্কিত ভার-পেনাল্টিতে রেয়াল মাদ্রিদকে জয় এনে দিলেন অধিনায়ক সের্খিও রামোস!
পরপর দুটি ম্যাচ হেরে এল ক্লাসিকো খেলতে জনশূন্য কাম্প নৌ-তে এসেছিল রেয়াল। সেই দুটি হারা ম্যাচেই খেলেননি রামোস। তাঁকে খেলিয়ে এল ক্লাসিকোর আগে ঝুঁকি নিতে চাননি জিনেদিন জিদান। শেষ পর্যন্ত তাঁর সিদ্ধান্তই কাজে লেগে গেল। কাম্প নৌ থেকে তৃতীয় ম্যাচ জিতে ফিরলেন জিদান, তাঁর অধিনায়কের চাতুর্যে।
বার্সেলোনা রক্ষণে রামোসের উপস্থিতি লেনলে-দের চাপ বাড়ায়, সর্বদা। তেমনই ৬০ মিনিটে একটা নির্বিষ বল উড়ে আসছিল যখন, রামোসের জার্সি ধরে লেনলে না-টানলে বলটা হয়ত পেতেনই না ৪৫তম এল ক্লাসিকো খেলতে-নামা রামোস। যেহেতু তাঁর জার্সি ধরে টেনেছিলেন লেনলে, পড়ে গিয়ে ভার-সিদ্ধান্তের জন্য আবেদন জানাতে ভোলেননি। পেনাল্টি বক্সে জার্সি ধরে টানার ঘটনা যত স্বাভাবিকই হোক না কেন, ভার-পরবর্তী যুগে অত্যন্ত ঝুঁকির। রেফারি জার্সি-টানা দেখে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। রামোস নিজেই গোল করে এগিয়ে দেন।
৯০ মিনিটে লুকো মেদরিচের গোলটা কফিনে শেষ পেরেকের মতো। ভিনিসিউসকে আটকাতে গিয়ে নেতো পড়ে গিয়েছিলেন। বল তাঁর থেকেই পরিবর্ত হিসাবে মাঠে-আসা মোদরিচের পায়ে। ইউরোপে আগের ম্যাচে শাখতারের বিরুদ্ধে দুরন্ত গোল পাওযা মোদরিচ ঠাণ্ডা মাথায় নেতোকে এড়িযে ডানপায়ের আউটস্টেপ দিয়ে গোলে রাখেন, বিনা বাধায়। নিশ্চিত করেন রেয়ালের ঘুরে-দাঁড়ানো।
৮৫ ও ৮৬ মিনিটে যথাক্রমে টোনি ক্রুস এবং রামোসের শট বাঁচিয়ে বার্সেলোনাকে ঘরের মাঠে চরম লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন গোলরক্ষক নেতো, পেনাল্টির সময়ও যিনি ঝাঁপিয়েছিলেন ঠিক দিকে। প্রথমার্ধেও একবার করিম বেনজেমার শট আটকেছিলেন। অন্তত তিনকাঠির তলায় আন্দ্রে টের স্টেগেন যে ছিলেন না, বুঝতে দেননি নেতো।
ম্যাচের প্রথম দশ মিনিটেই ১-১। প্রথমে গোল রেয়ালের। বার্সেলোনা রক্ষণ যথারীতি অদৃশ্য। বেনজেমা সাজিয়ে দিয়েছিলেন ফেদেরিকো ভালভের্দেকে। উরুগুয়ের ফুটবলার কোনও ভুল করেননি দলকে এগিয়ে দিতে। কিন্তু তিন মিনিটের মধ্যেই সমতা ফিরিয়েছিল বার্সেলোনা, কিশোর আনসু ফাতির পায়ে। লিওনেল মেসির উঁচু করে পাঠানো বল খুলে দিয়েছিল রেযাল-রক্ষণ, খোর্দি আলবা ঠিক সময় দৌড়ে পেছনে বক্সের মধ্যে রেখেছিলেন, ফাতি হাজির ডানপায়ের টোকায় থিবৌ কোর্তোয়াকে পরাস্ত করতে।
বার্সেলোনা দুবার সুযোগ পেয়েছিল। একবার মেসি পেরিয়ে গিয়েছিলেন রামোসকে, কিন্তু তাঁর প্রথম পোস্টের শট ঠিক দিক ভেবে কোর্তোয়া আটকে দেন। আর, দ্বিতীয়ার্ধে তখনও ১-১, ফিলিপে কুতিনিও বিনা বাধায় ৬ গজের মধ্যে থেকে হেড রাখতে পারেননি গোলে। সমান-সমান থাকার সময় এগিয়ে যেতে পারলে বিপক্ষের ওপর যে চাপ তৈরি করা যায়, বার্সেলোনা এখন তা করতে ব্যর্থ।
ক্রুস-কাসেমিরো-ভালভেরদেকে নিয়ে মাঝমাঠে দল সাজিয়েছিলেন জিদান। কোমান চেয়েছিলেন মাঝমাঠ শক্ত করতে, বার্সেলোনার পছন্দের ৪-৩-৩ থেকে সরে এসে ৪-৪-২ ছকে, যেখানে দে ইয়ং, বুসকেতস, পেদ্রি এবং কুতিনিও ছিলেন, একেবারে ওপরে ফাতির ঠিক পেছনে মেসি। রেয়াল মাঝমাঠ তুলনায় বেশি কার্যকরী, বল কেনে নেওয়া এবং তুলনায় বেশিবার বার্সেলোনা-রক্ষণ খুলে ফেলার মতো পাস দেওয়ার ক্ষেত্রে। বার্সেলোনা রক্ষণের মতোই মাঝমাঠেও পরাস্ত।
তাই, ইতিহাসের ২৪৫তম প্রতিযোগিতামূলক এল ক্লাসিকোয় ৯৭তম জয়ে রেয়াল মাদ্রিদ উঠে এল লা লিগার শীর্ষে, শেষ দুটি ম্যাচে কাদিজ এবং শাখতারের কাছে হার ভুলিয়ে। দশম ম্যাচে কোচ জিদানের পঞ্চম জয়, এই ম্যাচে। ২০০৯-এর পর থেকে রেয়াল মাদ্রিদের আর কোনও কোচের যে-রেকর্ড নেই।
বার্সেলোনা আবারও সমস্যায়, আগামী ২৮ অক্টোবর রাতেই যেতে হবে তুরিনে, জুভেন্তাসের বিরুদ্ধে খেলতে। একে অ্যাওয়ে ম্যাচ, তার ওপর আগের ম্যাচে নিজেদের মাঠে এমন হার। কোচ হিসাবে প্রথম এল ক্লাসিকো হেরে শুরুর পাশাপাশি চিন্তায় থাকবেন নতুন কোচ রোনাল্দ কোমান, তাঁর সেরা ফুটবলার মেসির ফর্ম নিয়ে।
চলে যেতে চেয়েছিলেন, দেওয়া হয়নি। পেনাল্টিতে দুটি ছাড়া গোল করতে পারেননি মেসি এই মরসুমে। চেষ্টায় কসুর ছিল না হয়ত। কিন্তু পিছিয়ে পড়ার পর যেমন ফুটবল তাঁর কাছে প্রত্যাশা করে বার্সেলোনা, বেশ কিছুদিন তো বটেই, শেষ কবে তেমন খেলতে পেরেছিলেন মেসি, উঠতে বাধ্য এই প্রশ্নটাও এবার!
Comments
Loading…