in খেলা, ,

মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে লড়ে হারল ইস্টবেঙ্গল

গোয়া: লিগ টেবলের সেরা দল মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত এক গোলে হার এড়াতে পারল না এসসি ইস্টবেঙ্গল। টানা সাত ম্যাচে অপরাজিত থাকার দৌড় শেষ হল লাল-হলুদ ব্রিগেডের।শুক্রবার তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে এক মুহূর্তের ভুলে মুর্তাদার ফলের হেডে যে গোল খেয়ে যায় তারা, তা শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও শেষ পর্যন্ত সমতা আনতে পারেননি ব্রাইট ইনোবাখারে, জাক মাঘোমা, অ্যান্থনি পিলকিংটনরা। মুম্বইয়ের মতো দলের বিরুদ্ধে বল পজেশনে অনেক এগিয়ে থেকেও, বিপক্ষের চেয়ে দেড়গুন বেশি পাস খেলেও শেষ পর্যন্ত গোলের দরজা খুলতে পারল না রবি ফাউলারের দল।

১৩ নম্বর ম্যাচে পঞ্চম হারের ফলে লিগ টেবলে দশ নম্বরেই রয়ে গেল এসসি ইস্টবেঙ্গল। মুম্বই সিটি এফসি-র অপরাজিত থাকার দৌড় চলছেই। এই নিয়ে টানা ১১ ম্যাচে অপরাজিত তারা। জিতল ন’নম্বর ম্যাচ।নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ব্রাইট ইনোবাখারেকে এ দিন ডাগ আউটে রেখেই প্রথম এগারো গড়েন তাদের কোচ রবি ফাউলার। তিন নামেন দ্বিতীয়ার্ধে। শুরু থেকে ব্রাইটের জায়গায় খেলেন হরমনপ্রীত সিং। গত ম্যাচে লাল কার্ড দেখা অজয় ছেত্রীর জায়গায় প্রথম এগারোয় ফিরে আসেন ম্যাটি স্টাইনমান। অন্য দিকে তিনটি পরিবর্তন করে এ দিন দল নামান মুম্বইয়ের কোচ সের্খিও লোবেরা। হার্নান সান্তানা, মান্দার রাও দেশাই ও রেইনিয়ে ফার্নান্ডেজের জায়গায় প্রথম এগারোয় তিনি রাখেন যথাক্রমে মেহতাব সিং, হুগো বুমৌস ও ভিগ্নেশকে।

ম্যাচের শুরু থেকে এসসি ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে চাপে রাখে মুম্বই সিটি এফসি। বারবার বিপক্ষের গোল এরিয়ায় ঢুকে পড়ছিলেন মুম্বইয়ের ফুটবলাররা। ১৪ মিনিটের মাথায় সিটার মিস করেন বুমৌস। সি গদার্ড বাঁ দিকের উইং থেকে যে ক্রস করেছিলেন, তা ধরতে গিয়ে দেবজিৎ মজুমদারের হাত থেকে বল ফস্কে যায়। প্রায় ফাঁকা গোলের সামনে সেই বল পেয়ে গিয়েছিলেন বুমৌস। কিন্তু অবিশ্বাস্য ভাবে সেই বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন ফরাসি মিডফিল্ডার।

প্রথম আধ ঘণ্টায় সে ভাবে কোনও ধারালো আক্রমণ শানাতে পারেনি এসসি ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু এই আধ ঘণ্টার মধ্যেই এগিয়ে যায় তাদের প্রতিপক্ষ। ২৭ মিনিটের মাথায় সেনেগালি ডিফেন্ডার মুর্তাদা ফলের দেওয়া হেডের গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় তারা। বক্সের ডানদিকের মাথা থেকে দেওয়া বুমৌসের ক্রসে যখন বলে মাথা ছোঁয়ান ফল, তখন বক্সের মধ্যে জনা সাতেক লাল-হলুদ জার্সির খেলোয়াড় থাকলেও তিনি ছিলেন সম্পুর্ণ ‘আনমার্কড’।

৩৫ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে শততম আইএসএল ম্যাচ খেলা নারায়ণ দাসের বাঁকানো ফ্রি কিকে হেড করে বিপক্ষের গোলে বল ঠেলে দিয়েছিলেন পিলকিংটন। কিন্তু তা সোজা মুম্বইয়ের গোলকিপার অমরিন্দর সিংয়ের হাতে চলে যায়। প্রথামার্ধের শেষ ১৫ মিনিটে এসসি ইস্টবেঙ্গল আক্রমণের ধার বাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বিপক্ষের দুর্ভেদ্য ডিফেন্সের বাধা পেরিয়ে গোলের দরজা খোলা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ও ডিফেন্সে বিপক্ষের অ্যাটাকারদের অনেক জায়গাও ছাড়তে দেখা যায় তাদের।

এই কারণেই ৪৩ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন মুম্বইয়ের ইংলিশ ফরোয়ার্ড অ্যাডাম লে ফন্দ্রে। বাঁ দিক থেকে বিপিন সিংয়ের ক্রসে ঠিকমতো হেড করতে পারলেই গোল পেতেন তিনি। কিন্তু মাথায় না লেগে বল তাঁর কাঁধে লাগায় গোলের বাইরে বেরিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে মাঝমাঠে সুরচন্দ্রর জায়গায় মহম্মদ রফিক ও রক্ষণে অঙ্কিত মুখার্জির জায়গায় রাণা ঘরামিকে নামান ফাউলার। পাঁচ মিনিটের মধ্যে চোট পেয়ে বেরিয়ে যান মিলন সিং-ও। তাঁর জায়গায় নামেন ওয়াহেংবাম লুয়াং। তবে তাতেও রক্ষণের দুর্বলতা কাটেনি। ৫৭ মিনিটের মাথায় ফের গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান ফল। বক্সের বাইরে থেকে আমেদ জাহুর দেওয়া পাস ধরে গোলের দিকে বল ঠেলেও দেন তিনি। তবে দেবজিৎ সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই বলের দখল নিয়ে নেন। এসসি ইস্টবেঙ্গল অবশ্য চেষ্টা ছাড়েনি। ৬০ মিনিটের পর থেকে গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। ৬৪ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে হেডে গোলের সুযোগ পেয়েও তা পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে পাঠান ড্যানিয়েল ফক্স। এই ঘটনার এক মিনিট আগেই ব্রাইট ইনোবাখারে নামেন ম্যাটি স্টাইনমানের জায়গায়। তার আগে ভারতীয় দলের তারকা ডিফেন্ডার মান্দার রাও দেশাইকে নামান মুম্বই কোচ লোবেরা। ব্রাইট মাঠে নামার সাত মিনিটের মধ্যেই লে ফন্দ্রের জায়গায় নামেন বার্থোলোমিউ ওগবেচে। ব্রাইটকে কড়া পাহাড়ায় রাখে মুম্বই সিটি এফসি। একবার তাঁকে ট্যাকল করতে গিয়ে আঘাত করেন দীর্ঘদেহী ফল, তার পরে আবার কড়া ট্যাকল করেন বুমৌস। তা ছাড়া ব্রাইট একটু নীচ থেকে খেলায় তিনি গোলের খুব একটা কাছাকাছিও ছিলেন না। এসসি ইস্টবেঙ্গল এ দিন বল নিজেদের দখলে অনেক বেশি রাখে, পাসও খেলে বেশি। কিন্তু কাজের কাজটা করতে পারেনি। মুম্বই সিটি এফসি-র চিরপরিচিত পাস-নির্ভর ফুটবলও এ দিন এসসি ইস্টবেঙ্গলের দাপটে ঢাকা পড়ে যায়। ফলে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবলের ওপরই বেশি নির্ভর করতে দেখা যায় তাদের। শেষ ১৫ মিনিটে আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় লাল-হলুদ ব্রিগেড। এই ১৫ মিনিটে সমতা আনার জন্য তারা মরিয়া হয়ে ওঠে ও অন্তত চারবার গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। ৮৩ মিনিটের মাথায় লোবেরা যেমন হুগো বুমৌসকে তুলে নেন, তেমনই ফাউলার একই সঙ্গে তুলে নেন ড্যানিয়েল ফক্সকে। তাঁর জায়গায় নামেন হলোওয়ে। এই পরিবর্তনের পরেই স্কট নেভিল বক্সের মধ্যে ঢুকে সোজা গোলে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু অমরিন্দর তা অসাধারণ সেভ করেন। এর দু’মিনিট পরেই হলোওয়ের ক্রস থেকে বল পেয়ে সামনে ফাঁকা গোল পেয়ে গিয়েছিলেন হরমনপ্রীত। কিন্তু তিনি হেড করে গোলের বাইরে বল পাঠান। স্টপেজ টাইমেও বক্সের মধ্যে সুযোগ পেয়েছিলেন হরমনপ্রীত। কিন্তু ডিফেন্সের বেড়া টপকাতে পারেননি। স্টপেজ টাইম শেষ হওয়ার আগে সমতা আনার যাবতীয় চেষ্টা ব্যর্থ হয় তাদের।

What do you think?

Written by News Editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মমতা বন্দোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে দাঁড়ালে আমি হারাব: শুভেন্দু