গোয়া: রবিবার ফতোরদায় দলকে জয়ে ফিরিয়ে আনার পরে এসসি ইস্টবেঙ্গলের সহকারী কোচ অ্যান্থনি গ্রান্ট জানিয়ে দিলেন, এই মরশুমে ভবিষ্যতের জন্য দল গড়ার উদ্দেশ্যেই কাজ করছেন তাঁরা। প্রশংসা করেন দলের দুই নবাগত বাঙালি ফুটবলার সার্থক গলুই ও সৌরভ দাসেরও। অন্য দিকে, এই ম্যাচ থেকে কোনও পয়েন্ট না পেয়ে হতাশ জামশেদপুরের কোচ ওয়েন কোইল।
টানা পাঁচ ম্যাচে জয়ের মুখ না দেখা লাল-হলুদ ব্রিগেড এ দিন জামশেদপুর এফসি-কে ২-১ গোলে হারিয়ে লিগ টেবলে এক ধাপ উঠে এল। গত ম্যাচে লাল-হলুদ বাহিনীকে যে বেহাল অবস্থায় দেখা গিয়েছিল, তার চেয়ে একেবারে অন্য চেহারায় দেখা যায় তাদের। রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে এই ম্যাচে লিগের তৃতীয় জয় পায় তারা। শুরুতেই ম্যাটি স্টাইনমানের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ৬৮ মিনিটে স্টাইনমানেরই সহায়তায় ব্যবধান বাড়ান পিলকিংটন।
দলের এই উন্নত পারফরম্যান্স নিয়ে রবি ফাউলারের সহকারী গ্রান্ট বলেন, “দলটাকে আমরা ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করছি। এই মরশুমে এত ফুটবলারকে আমরা মাঠে নামাচ্ছি কেন, তার অন্যতম কারণ এটাও। আমার এই খেলোয়াড়দের পরখ করে নিচ্ছি , যাতে পরের মরশুমে একটা ভাল দল তৈরি করে নেওয়া যায়”।
জানুয়ারির দলবদলে এসসি ইস্টবেঙ্গল প্রথমে দুই ডিফেন্ডার অঙ্কিত মুখার্জি ও রাজু গায়কোয়াড়কে নিয়ে আসে। ওঁরা এসে যাওয়ায় দলের রক্ষণ শক্তিশালী ও সঙ্ঘবদ্ধ হয়। সম্প্রতি তারা আর এক ডিফেন্ডার সার্থক গলুই ও মিডফিল্ডার সৌরভ দাসকে নিয়ে আসে। রবিবার দুজনেই তাঁরা মাঠে নামেন ও যথেষ্ট ভাল পারফরম্যান্স দেখান।
এই দুই বাঙালির প্রশংসা করে গ্রান্ট বলেন, “ওরা দু’জনেই ভাল ফুটবলার। আজ ওদের পেশাদার মানসিকতা নিয়ে খেলতে বলেছিলাম। ওরা সেটাই করেছে। আগামী সপ্তাহে ওদের আরও ভাল খেলতে হবে। এটাই এখন ওদের কাজ। ওদের আরও উন্নতি করতে হবে। তবে শুরুটা ওরা দারুন করেছে”।
নির্বাসিত প্রধান কোচ রবি ফাউলার দলের সঙ্গে না থাকায় দলের ছেলেরা যে বাড়তি প্রেরণা পেয়েছেন, তা মানতে রাজি নন গ্রান্ট। তিনি বলেন, “আমরা সবাই পেশাদার। সারা জীবন ফুটবলেই কাটিয়েছি। সবারই বড় ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রতি ম্যাচেই আমরা জিততেই নামি। কিন্তু সব ম্যাচে জেতা মোটেই সোজা নয়। কখনও সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হয়, কখনও পেনাল্টি প্রাপ্য হলেও পাই না আবার পেয়েও যাই। খুব ছোট ছোট কারণে ফারাক হয়ে যায়। কোচের অভাব আমরা অবশ্যই অনুভব করেছি। কিন্তু আমরা যারা সাপোর্ট স্টাফ রয়েছি, তারা সবাই কোচের খুব কাছের। আমরা সবাই মিলে ঠিক করি আজ আমাদের দলকে জয়ে ফেরাতেই হবে। কোচ মাঠে ছিলেন না ঠিকই, কিন্তু চেঞ্জিং রুমে ছিলেন। এটাও কম নয়”।
গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদারের বদলে সুব্রত পালকে খেলানো নিয়ে গ্রান্ট বলেন, “দেবজিৎকে আমরা অনেক ম্যাচে সুযোগ দিয়েছি। ও যা সুযোগ পেয়েছে, তাকে ভরপুর কাজে লাগিয়েছে। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এ বার সুব্রতকে যখন দলে আনা হয়েছে, তখন ওকেও আমরা কিছুটা সুযোগ দিতে চাই। এর মানে এই নয় যে দেবজিৎকে আমরা দল থেকে বাদ দিলাম। গোলকিপিংয়ে আমরা দ্বিতীয় অপশনে যেতে চাই। এটা আমাদের দলের কৌশল বলতে পারেন”।
অন্য দিকে, জামশেদপুর এফসি-র কোচ ওয়েন কোইল বলেন, “ম্যাচটা যদি বিশ্লেষণ করেন, তা হলে দেখবেন, প্রথমার্ধে আমরা সমতা আনার অনেক চেষ্টা করেও পারিনি। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভাল খেলছিলাম। কিন্তু একটা বাজে পাস দিয়ে ওদের আমরা দ্বিতীয় গোলটা দিয়ে দিই। আমরা (গোল খাওয়ার পরে)ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছি এই ম্যাচে। ওদের চাপে রেখেছিলাম আমরা। তাই এই ম্যাচ থেকে একেবারে কিছু না পাওয়াটা হতাশাজনক”।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার সাত মিনিট আগে পিটার হার্টলের হেড থেকে করা গোলে ব্যবধান কমে। স্টপেজ টাইমে ভাল্সকিসের গোলমুখী হেড গোলকিপার সুব্রত পাল সেভ না করলে ফের দু’পয়েন্ট নষ্ট হত তাদের। ভাল্সকিসদের কোচ বলেন, “গোলের পরে সব মিলিয়ে যে দশ মিনিট সময় পেয়েছিলাম আমরা, আমাদের সমতা ফেরানো উচিত ছিল। দু-তিনটে ভাল শটও নিয়েছিলাম গোলে। যখন আমরা এগিয়ে নেই, তখন সে রকম স্পিরিট নিয়েই খেলা উচিত”।