গোয়া: প্রথমবার ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ উপভোগের মাঝখানেও দলের ভারতীয় ফুটবলারদের প্রশংসা করতে ভুললেন না মুম্বই সিটি এফসি-র স্প্যানিশ কোচ সের্খিও লোবেরা। এই সাফল্যের নেপথ্যে যে তাঁর দলের দেশীয় ফুটবলারদের অবদান যথেষ্ট, তা স্বীকার করে নেন তিনি। শনিবার এক ভারতীয়র করা গোলেই হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয় লোবেরার দল।এ দিন ফতোরদা স্টেডিয়ামে টানটান উত্তেজনায় ভরা ফাইনাল ম্যাচে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ফল ১-১ রাখার পরে মণিপুরী মিডফিল্ডার বিপিন সিংয়ের গোলে ম্যাচ জিতে নেয় মুম্বই সিটি এফসি।
১৮ মিনিটের মাথায় ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে এটিকে মোহনবাগান এগিয়ে যাওয়ার পরে তাঁরই সতীর্থ স্প্যানিশ ডিফেন্ডার তিরির নিজ গোলে সমতা আনে মুম্বই। সব শেষে বিপিন সিংয়ের গোলে ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়।এই অসাধারণ জয় নিয়ে মুম্বইয়ের দলের কোচের প্রথম প্রতিক্রিয়া, “এই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে এর মধ্যে। অনেক পরিশ্রমও রয়েছে। মুম্বই সিটি এফসি পরিবারের জন্য খুবই খুশি আমি। দলের ছেলেদের নিয়েও গর্বিত। আমরা একটা পরিবারের মতো এবং মাঠেই নিশ্চয়ই তার প্রমাণ পেয়েছেন। এই জয়টা আমাদের প্রাপ্যই ছিল”।
এই সাফল্যের জন্য ক্লাবের মালিকপক্ষ বিখ্যাত সিটি ফুটবল গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান লোবেরা। বলেন, “দলের সবাই, আমাদের পরিবার, সিটি ফুটবল গ্রুপের কর্তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছেন। অনেক পরামর্শও পেয়েছি তাঁদের কাছ থেকে। এই লিগজয়টা সত্যিই স্পেশাল। টানা পাঁচ মাস জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকে এত বড় সাফল্য পাওয়া মোটেই সোজা ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমরা যে পেরেছি, সে জন্য আমি খুবই খুশি। এখন আমাদের এই সাফল্য উপভোগ করার সময়”।সাফল্যের নেপথ্যে থাকা সাপোর্ট স্টাফেরও প্রশংসা করে কোচ আরও বলেন, “ট্রফি জিততে হলে সবসময় দলে ভাল খেলোয়াড় থাকা প্রয়োজন। ভাল স্টাফ থাকাটাও খুব জরুরি। সবচেয়ে জরুরি ভাল ক্লাব। একই মরশুমে পরপর দুটো ট্রফি জেতা মোটেই সোজা কাজ না। আমরা সেই ইতিহাস তৈরি করতে পেরেছি। শীর্ষে উঠতে পেরেছি আমরা”।
দলের ভারতীয় ফুটবলারদের ভূয়ষী প্রশংসা করে লোবেরা বলেন, “ট্রফি জয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হয়েছে ভারতীয় ফুটবলাররাই। প্রথম এগারোয় ছ’জন (ভারতীয়) তো থাকেই। বিপিন সিং এই মরশুমে দারুন খেলেছে। অনেক ফুটবলারই ভাল খেলছে। যারা সুযোগ পাচ্ছে, তারা তো বটেই, যারা বেশি সুযোগ পায় না, তারাও সুযোগ পেলেই ভাল খেলে। ওদের মধ্যে সবসময়ই আমি ইতিবাচক মনোভাব দেখেছি। ওদের মুখে সব সময়ই হাসি লেগে থাকে”।মুম্বইয়ের সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে বার্সেলোনা এফসি-র জুনিয়র দলের প্রাক্তন কোচ বলেন, “সমর্থকদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করি, ওঁদের সঙ্গে দেখা করার, একসঙ্গে সাফল্য উদযাপন করার সুযোগ শীঘ্রই আসবে। আশা করি ওঁদের হাতে ট্রফি তুলে দিতে পারব। সারা বিশ্বে সময়টা ভাল যাচ্ছে না ঠিকই। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সাফল্য সেলিব্রেট করাটা খুব জরুরি”।সিটি ফুটবল গ্রুপের উৎসাহে মুম্বই সিটি এফসি যে আরও বড় লক্ষ্যের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, তা জানিয়ে লোবেরা এ দিন বলেন, “আমাদের খেলোয়াড়রা সবাই খুব উচ্চাকাঙ্খী। ক্লাবের বিরাট প্রকল্প রয়েছে। ওঁদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই আমার মনে হয়েছিল ওদের প্রকল্পটা শুধু বড় নয়, অসাধারণও। এই ধরনের প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ভালই হয়। আশা করি, আগামী মরশুমেও আমরা ফের সফল হব”।
হিরো আইএসএল ৭ মরশুমের সেরারা:
গোল্ডেন গ্লাভ – অরিন্দম ভট্টাচার্য (এটিকে মোহনবাগান)
গোল্ডেন বুট – ইগর অ্যাঙ্গুলো (এফসি গোয়া)
লিগের হিরো – রয় কৃষ্ণা (এটিকে মোহনবাগান)
সেরা উঠতি ফুটবলার – লালেঙমাউইয়া (নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি)
লিগের সেরা জয়সূচক পাস – আলবার্তো নগুয়েরা (এফসি গোয়া)।