in খেলা, ,

সুশীলদের বিপক্ষে অনবদ্য জয় এটিকে এমবি’র

গোয়া: সাধারণত দলের ও দলের ফুটবলারদের সম্পর্কে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় না এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে। কিন্তু মঙ্গলবার তাঁর দল বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারানোর পরে হাবাসকে সেই মেজাজেই দেখা গেল। ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি বলেন, “দলের ছেলেদের জন্য আমার গর্ব হচ্ছে। আজ দল অসাধারণ ফুটবল খেলেছে। পুরো ম্যাচটা আমরাই নিয়ন্ত্রণ করেছি”।

এ দিন ফতোরদা স্টেডিয়ামে গত হিরো আইএসএলের সেমিফাইনালিস্ট বেঙ্গালুরু এফসি-কে ২-০-য় হারায় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। সুনীল ছেত্রী ও তাঁর দলের ওপর রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে এই সাফল্য অর্জন করে কলকাতার দল। এই জয়ের ফলে ১৬ ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে এখন তারা লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট পিছনে।

মঙ্গলবার ৩৭ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে এ বারের হিরো আইএসএলে তাঁর ১২ নম্বর গোলটি করে দলকে এগিয়ে দেন ফিজিয়ান তারকা স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণা। তার সাত মিনিট পরেই বিপক্ষের বক্সের বাঁ দিকের মাথা থেকে নেওয়া ফ্রি কিকে সোজা জালে বল জড়িয়ে দেন সদ্য ওডিশা এফসি থেকে সবুজ মেরুন শিবিরে আসা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্সেলো পেরেইরা বা মার্সেলিনহো। তিনিই ম্যাচের ‘হিরো’-র খেতাব পান।

মার্সেলিনহোর এই ফর্মে ফেরা নিয়ে হাবাস বলেন, “মার্সেলিনহো শুধু ভাল খেলোয়াড়ই নয়, খুব বুদ্ধিমান খেলোয়াড়ও। দলের উন্নতির জন্য ওর প্রতিভাকে কাজে লাগাতে হবে আমাদের। ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দলের প্রতি ও নিজেকে উজাড় করে দিতে প্রস্তুত”।

সুনীল ছেত্রীকে এ দিন এতটাই কড়া পাহাড়ায় রেখেছিলেন এটিকো মোহনবাগান ডিফেন্ডাররা, যে তাঁকে বেশ হতাশ লাগছিল। একাধিকবার তাঁকে বিপক্ষের ফুটবলারদের অবৈধ ভাবে আক্রমণ করতে দেখা যায়। ৭০ মিনিটের মাথায় যে ভাবে প্রথমে লেনি রড্রিগেজের গোড়ালিতে আঘাত করেন ও পরে তাঁর জার্সি টেনে ধরে মাটিতে ফেলে দেন, তাকে সুনীল ছেত্রী-সুলভ মনে হয়নি। এ দিন হলুদ কার্ডও দেখতে হয় তাঁকে। 

সুনীলকে কড়া পাহাড়ায় রাখার পরিকল্পনা নিয়েই যে নেমেছিলেন তাঁর দলের ডিফেন্ডাররা, তা এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়ে সুনীলকে পাহাড়া দেওয়া ফুটবলারদের প্রশংসা করে হাবাস বলেন, “হ্যাঁ, সুনীলকে পাহাড়া দেওয়ার কাজটা আমাদের ছেলেরা বেশ ভাল করেছে। ও ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি। ফুটবলে বিপক্ষের ফুটবলারদের শ্রুদ্ধা করতে হয়। আর সুনীল তো ভারতীয় দলের অধিনায়ক। ওকে আমি ২০১৪ থেকে দেখছি এবং এখনও ওর সম্পর্কে একই ধারণা আমার। সুনীলকে ওর কেরিয়ারের জন্য অভিনন্দন জানাই। কারণ, আমার কাছে ও এ দেশের অন্যতম সেরা ফুটবলার”।

এই জয়ের ফলে শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে এখন মাত্র এক পয়েন্টের ব্যবধান এটিকে মোহনবাগানের। অর্থাৎ বাকি তিনটি ম্যাচের সবকটিতে এটিকে মোহনবাগান জিতলে ও মুম্বই সিটি এফসি একটি ম্যাচে ড্র করলেই এক নম্বরে থেকে লিগ শেষ করবে ও আগামী বছর এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল। যদি উল্টোটা হয়, তা হলে অবশ্য সাগরপাড়ের দলই এক নম্বরে থাকবে।

সম্প্রতি মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ সের্খিও লোবেরা বলেছেন, তাঁরা লিগ পর্বের শেষে এটিকে মোহনবাগানের সঙ্গে চার পয়েন্টের ব্যবধান রেখেই শীর্ষে থাকতে চান। এই প্রসঙ্গে হাবাস বলেন, “এই একই কথা আমিও বলছি। আমিও চার পয়েন্টের ব্যবধান রেখেই প্লে-অফে প্রবেশ করতে চাই”।

ম্যাচের পরে সবুজ মেরুন শিবিরের তারকা ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গন আইএসএল মিডিয়াকে বলেন, “তিন পয়েন্ট, ক্লিন শিট, ভাল পারফরম্যান্স, টানা তিন ম্যাচে জয়। সব মিলিয়ে আমরা খুবই খুশি। তবে এখনও আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। এখনও অনেক জায়গা রয়েছে, যেগুলো শোধরানো দরকার। এই দলটার সম্ভাবনা প্রচুর। আজই প্রমাণ হল আমরা কতটা উন্নতি করতে পারি। পরের ম্যাচগুলোতে এই একই মানসিকতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তা বজায় রেখে মাঠে নামতে হবে আমাদের”।  

অন্য দিকে, দলের এমন অসহায় হারে দৃশ্যতই বিধ্বস্ত ভারপ্রাপ্ত কোচ নৌশাদ মুসা স্বীকার করে নেন, তাঁর দল এ দিন মোটেই ভাল খেলতে পারেনি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “প্রথম আধ ঘণ্টা আমরা ভালই খেলছিলাম। কিন্তু ওরা পেনাল্টি থেকে গোল করার পরেই ছেলেরা মোটিভশেন হারিয়ে ফেলে। তার পরে তো আপনারা ওদের হতাশা দেখেছেনই। অনর্থক কিছু ফাউল করে বসে ওরা। এগুলো এড়ানো যেত”।

এটিকে মোহনবাগানের আধিপত্য মেনে নিয়েই তিনি বলেন, “ওদের মতো দলের বিরুদ্ধে খেলা সব সময়ই কঠিন। ওদের ডিফেন্স খুবই মজবুত। ওদের দলে ভাল ভাল খেলোয়াড় রয়েছে। তার ওপর দু’গোলে পিছিয়ে গেলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায়। শুরুটা ভালই করেছিলাম। মাথা ঠাণ্ডা রেখে বল যথাসম্ভব বেশি দখলে রাখাই ছিল আমাদের পরিকল্পনা। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ম্যাচে ফিরতে চেষ্টা করি। কিন্তু কোনও কিছুই আমাদের পক্ষে যায়নি”। এ দিন রাহুল ভেকের গুরুতর চোট লেগেছে বলে জানান মুসা। তাঁকে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে। এই হারের ফলে (১৭ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে ৬ নম্বরে) তাদের সেরা চারে ওঠার আশা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেলেও আশা ছাড়তে রাজি নন মুসা।  বলেন, “অন্যান্য ম্যাচের ওপর নির্ভর করে আছে আমাদের ভাগ্য। তবে আমাদের পজিটিভ থাকতে হবে”।

What do you think?

Written by News Editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রাজ্যে এসে মমতাকে আক্রমণ নাড্ডার